বিসিকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৭ সালে তৎকালীন কোয়ালিশন সরকার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন নামে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান গঠনের লক্ষ্যে তদানীন্তন গণপরিষদে বিল উৎথাপন করেন। এরই ফলশ্রুতিতে একই বছরের ৩০ মে পূর্ব পাকিস্তান ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (EPSIC) ইপসিক প্রতিষ্ঠিত হয়, যা স্বাধীনতা উত্তরকালে বিসিক (BSCIC) নাম ধারন করে। বিসিক বেসরকারি খাতে ক্ষুদ্র কুটির ও গ্রামীন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও কুটির খাতের পোষক কর্তৃপক্ষ হিসাবেও দায়িত্ব পালন করছে। বর্তমানে বিসিকের মৌলিক কাজ শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি যে উদ্যোক্তারা চাকুরি করবেনা, তারা শিল্প কারখানা্ স্থাপন করে অন্যকে চাকুরি দিবে, তারা দাতা হবে গ্রহীতা নয়।
পরিচালনা পর্ষদঃ-
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত অতিরিক্ত সচিব বা তদুধর্ব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বিসিকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। পরিচালক পর্ষদের অপর দশজন সদস্যও সরকারের যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা যারা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরিচালক পর্ষদের সহযোগিতা ও প্রশাসনিক বিষয় তদারকীর জন্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন বিসিকের জিএম পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা।
প্রধান কার্যালয়ঃ-
করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় ৩৯৮, শিল্প এলাকা, তেজগাঁও, ঢাকায় অবস্থিত। এখানে পরিচালক পর্ষদের সদস্যগন সার্বক্ষণিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বিসিক প্রধান কার্যালয়ে মোট ১০(দশ) টি বিভাগ রয়েছে। বিভাগ গুলো হলো প্রশাসন, হিসাব ও অর্থ, ব্যবস্থাপনা তথ্য পদ্ধতি, উন্নয়ন ও সম্প্রসারন, পরিকল্পনা, প্রাকল্প, প্রযুক্তি, পুরকৌশল ও নিরীক্ষা বিভাগ। বিভাগের প্রধান হিসেবে মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
আঞ্চলিক কার্যালয়ঃ-
ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগীয় শহরে বিসিকের ৪ (চার) টি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। এগুলোর প্রধান হচ্ছেন মহাব্যবস্থাপক সমপর্যায়ের আঞ্চলিক পরিচালক যিনি অধিনস্ত জেলাসমুহের কার্যক্রম পরিচালনা ও তদারকী করে থাকেন।
জেলা কার্যালয় :-
জেলা কার্যালয় হিসেবে প্রতিটি জেলায় ১ টি করে জেলা কার্যালয় রয়েছে। বস্তুত এ জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে বিসিকের অধিকাংশ সেবা সহায়তা সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদেরকে প্রদান করা হয়ে থাকে।
জেলা কার্যালয়, ফরিদপুরঃ-
উক্ত দপ্তরের প্রধান হচ্ছেন উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) , তিনি জেলা কার্যালয় ও শিল্পনগরীসহ ফরিদপুর জেলায় বিসিকের সকল কার্যক্রম তদারকী ও পরিচালনা করে থাকেন।
জেলা কার্যালয়ের সেবা সহায়তা কার্যক্রমঃ-
(ক) বিনিয়োগ পূর্ব সহায়তাঃ-
০১। শিল্পোদ্যোক্তা চিহ্নিতকরণ বা উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা।
০২। শিল্পোদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিল্প ষ্থাপনের বিষয়ে উদ্যোক্তাগণকে ধারনা দেয়া।
০৩। বিপনন সমীক্ষা প্রণয়ন।
০৪। বিপনন সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন প্রণয়ন।
০৫। উপ-খাত ভিত্তিক সমীক্ষা প্রণয়ন।
০৬। প্রজেক্ট প্রোফাইল প্রণয়ন।
০৭। প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নও মূল্যায়ন।
০৮। কারিগরী তথ্য সংগ্রহ ও বিতরণ।
(খ) বিনিয়োগ কালীন সহায়তাঃ-
০৯। অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা সহ শিল্প নগরীতে প্লট বরাদ্দ প্রদান।
১০। ঋণ ব্যবস্থাকরণ / ঋণ সহায়তা প্রদান।
১১। উদ্যোক্তার নিজস্ব বিনিয়োগ শিল্প স্থাপনে সহায়তা দান।
১২। নক্শা নমুনা উন্নয়ন ও বিতরণ।
১৩। ঋণ বিতরনকৃত প্রকল্পের বাস্তবায়ন তদারকীকরন।
১৪। ঋণ আদায়ের জন্য শিল্প ইউনিট পরিদর্শন।
(গ) বিনিয়োগোত্তর সহায়তাঃ-
১৫। ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মেলন আয়োজন।
১৬। পন্যের মান নিয়ন্ত্রন ও উন্নয়নে সহায়তা প্রদান।
১৭। সাব-কন্ট্রাকটিং ইউনিট তালিকা ভূক্তি করন।
১৮। সাব-কন্ট্রাকটিং সংযোগ স্থাপন।
১৯। সেমিনার কর্মশালা ইত্যাদির আয়োজন।
২০। বিভিন্ন তথ্য বুলেটিন প্রকাশ করা।
২১। কর্মসংস্থান সিৃষ্টি করা।
(ঘ) বিবিধ কর্মকান্ডঃ-
২২। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানের রেজিষ্ট্রেশন প্রদান।
২৩। কর শুল্ক ইত্যাদি মওকুফ বিষয়ে সুপারিশ প্রদান।
২৪। শিল্পের কাঁচামাল ও মোড়ক সামগ্রী আমদানীর ক্ষেত্রে প্রাধিকার নির্ধারনে সুপারিশ প্রদান।
মৌমাছি পালন প্রকল্পঃ
আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌচাষ ও মধু উৎপাদনের উপর ফরিদপুর বিসিক উদ্যোক্তাগনকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করে আসছে। প্রশিক্ষণ শেষে উদ্যোক্তাগনকে প্রশিক্ষণ ভাতা এবং বিনামূল্যে মৌ বাক্স ও মধু নিশ্কাশন যন্ত্র ইত্যাদি প্রদান করা হয়ে থাকে। সল্প শিক্ষিত বেকার লোকজন ছাড়াও বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত যুবক-যুবতী, ছাত্র-ছাত্রী এবং বয়স্ক পুরুষ ও গৃহিনীরাও এই ধরনের প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারেন। মৌমাছি পালন কর্মসূচী দারিদ্র বিমোচনের পাশাপাশি পরাগায়নের মাধ্যমে শস্যফলের উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়ক। উদ্যোক্তাদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ফরিদপুর জেলায় বিভিন্ন এলাকায় উক্ত প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
আয়োডিনযুক্ত লবন প্রকল্পঃ
দেশে আয়োডিনের অভাব জনিত রোগ নিরসন কল্পে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ইউনিসেফের সহযোগীতায় সার্বজনীন আয়োডিন যুক্ত লবন তৈরী কার্যক্রমের মাধ্যমে আয়োডিন ঘাটতি পূরন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। আয়োডিনের অভাবে মানব দেহে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলির সৃষ্টি হয়।
-আয়োডিনের অভাবে শিশুর শারিরীক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
-গর্ভাবস্তায় আয়োডিনের অভাবে অনাকাঙ্খিত গর্ভাপাতের ঝুকি বাড়ে, তাছাড়া শিশুর শারিরীক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার আশংকা থাকে।
-আয়োডিনের অভাব জনিত বিভিন্ন শারিরীক ও মানসিক সমস্যার মধ্যে গলগন্ড, হাবাগোবা, বামনত্ব,প্রতিবন্ধী উল্লেখযোগ্য।
-কর্মক্ষমতা কমে যায়, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে নৈতিবাচক প্রভাব ফেলে।
-আয়োডিন ঘাটতি জনিত রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হচ্ছে পরিবারের সবাই প্রতিদিন সঠিক মাত্রার আয়োডিন যুক্ত লবন খাওয়া।
আয়োডিন যুক্ত লবন ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সভাপতিত্বে জেলা লবন কমিটি, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাপতিত্বে উপজেলা লবন কমিটি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাজারে আয়েডিন বিহীন লবন বিক্রী বন্ধ করার লক্ষ্যে ইতোপূর্বে জেলা লবন কমিটির ২০টি সভা্ও ফরিদপুরের প্রত্যেকটি উপজেলাতে বেশ কয়েকবার উপজেলা লবন কমিটির সভা এর ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ১১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। তাছাড়া অত্র জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৮টি ত্র্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আয়েডিনের অভাব জনিত রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আমরা সকলেই আয়েডিন যুক্ত লবন খাবো এবং অন্য ভাইকে আয়োডিন যুক্ত লবন খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করবো।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস